মাঝে মাঝে কিছু মুভি দেখে নিজে থেকেই অবাক হতে হয়, এত বাজেও কোনো মুভি হয়? সবসময় যেহেতু ভালো মুভির রিভিউ নিয়ে আলোচনা করি, আজ না হয় একটু বাজে মুভি নিয়ে আলোচনা সমালোচনা করা যাক। কথা বলছি বছরের অন্যতম হাইপ তোলা মুভি লাক্সমি বা লক্ষ্মী নিয়ে। অক্ষয় কুমার অভিনীত এই মুভির অপেক্ষায় ছিলেন হাজারও বলিউড দর্শক, করোনায় তেমন কোনো ভালো মুভি রিলিজ না হওয়ায় সবার নজর ছিল এই মুভিতেই। আর এখানে “লাক্সমি” মূলত একজন ট্রান্সজেন্ডার চরিত্রের নাম, আর তার জীবনকাথার অংশবিশেষ নিয়েই মুভির গল্প এগিয়ে চলা।
পরিচালক হিসেবে ছিলেন অন্যতম জনপ্রিয় একজন অভিনেতা লরেন্স রাঘব। তার ক্যারিয়ারের অন্যতম সফল মুভি কাঞ্চনা দেখেনি, এরকম মানুষ খুব কমই আছে। হরর মুভির একেবারে স্ট্যান্ডার্ড কোয়ালিটি বজায় রেখে সাথে অসাধারণ কিছু হাস্যরসাত্মক অংশ নিয়ে সবার মন জয় করে নিয়েছিলে আরামসে। সেই আশ্বাস থেকেই সবার আগ্রহ ছিল, হয়তো আরও একটা মাস্টারপিস মুভি আসতে চলেছে।
মুভিঃ লাক্সমি
ইন্ডাস্ট্রিঃ বলিউড
ভাষাঃ হিন্দি
দেশঃ ভারত
রানটাইমঃ ১৪১ মিনিট
রিলিজ সালঃ ২০২০
আইএমডিবি রেটিংঃ ২.২/১০
পার্সোনাল রেটিংঃ ১.৫/১০
পরিচালকঃ লরেন্স রাঘব
কাস্টঃ অক্ষয় কুমার, কিয়ারা আদবানী
জনরাঃ অ্যাকশন,কমেডি, হরর
কেন্দ্রীয় চরিত্র বলতে সবার প্রথমে যে আস্থার নামটি আসে তা হলো অক্ষয় কুমার। বর্তমানে জনপ্রিয় এবং হাই প্রোফাইল অভিনেতাদের মাঝে একেবারে শীর্ষ তালিকায় আছেন এই অভিনেতা। করোনায় ডিরেক্ট ওটিটিতে কোনো মুভি আসবে তাও আবার সাথে বর্তমান ইয়াংদের ক্রাশ কিয়ারা আদ্ভানির সাথে, তা হলে তো অবশ্যই বহুল প্রতীক্ষিত বলাই যায়। যদিও কিয়ারা আদ্ভানিকে সেভাবে মুভিতে উল্লেখযোগ্যভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়নি, তাও তার ফ্যানবেজ বেশি হওয়ায় হাইপটা ছিল জোড়ালো। এদিকে বিগত বেশ কয়েক বছরে অক্ষয় তার অসাধারণ সব স্ক্রিপ্ট পছন্দ ক্রমের জন্য বয়সী প্রশংসিত হয়ে আসছেন। কিন্তু এই মুভি দেখার পর সবার একটাই প্রশ্ন, এ কী করলেন অক্ষয়? অভিনয়ের মাত্রা বলতে একেবারে জোর করে কোনো জিনিসের প্রতি আধিক্যেতা দেখানো হয়েছে। আর হাসির সিনগুলো একেবারে বাজে ছিল। মনে হচ্ছিল যেন তারা আমাদের জোর করে হাসাবা। আর মুভির রানিং স্পিড আর টিম স্প্রিড দেখে মনে হচ্ছিল, তারা যেন বিপদে পড়ে এই মুভি করতে বসেছে। তবে অক্ষয়ের ডাই-হার্ড ফ্যান যারা আছেন তাদের জন্য খানিকটা স্বস্থির খবর হলো, এরকম ক্রিটিক্যাল চরিত্রে সম্ভবত অক্ষয় প্রথম অভিনয় করেছে এবং পুরো ফাটিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছে। কারণ ট্রান্সজেন্ডার চরিত্রে অভিনয় করাটা কিছুটা কষ্টসাধ্য বলা যায়।
আসিফ( অক্ষয় কুমার) একজন বিজ্ঞানমনস্ক এবং যুক্তিবাদী মানুষ, তাই সে এসব ভুতপ্রেতে বিশ্বাস করে না। শুধু তাই নয়, সে উল্টো বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতায় মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করে এসব তন্ত্রমন্ত্র, ঝাড়ফুক সহ নানান কুসংস্কার মূলক অনাচার থেকে। এমনকি সে এটাও বলে, যদি সে কখনো ভুতের দেখা পায়, তবে সে চুড়ি পরে রাস্তায় ঘুরে বেড়াবে। তো বুঝতেই পারছেন ভুতের বিষয়ে সে একেবারে কঠোর পন্থী একজন মানুষ। এরকম জগাখিচুরি জাতীয় মুভির ক্ষেত্রে প্লট কোথা থেকে শুরু করব, তাই মাথায় আসে না।
একদিন আসিফ এবং তার প্রেমিকা রেশমি দু’জন বাবা-মায়ের অমতে গিয়ে পালিয়ে বিয়ে করে। তারপর হুট করে বিবাহ বার্ষিকী উপলক্ষে তাদের নিমন্ত্রণ করা হয়, আর সেই সুযোগে আসিফ চায় যেন পরিবারের মধ্যকার যে বিভেদ রয়েছে তা কিছুটা কমিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার। তাই নানান কৌশলে তাদের মন জয় করার চেষ্টা করে। আর ঠিক তারপরেই তার উপর ভর করে এক প্রেতাত্মা, যেখান থেকেই শুরু হয়, লাক্সমি বা লক্ষ্মী নামক গল্পের পথচলা।
যারা কাঞ্চনা দেখার পর খুব বেশি আশা নিয়ে দেখতে যাবেন, তাদের প্রথমেই সতর্ক করে রাখছি, খানিকটা দূরত্ব বজায় রাখতে পারেন। কারণ কাঞ্চনাতে যে অসাধারণ স্ক্রিন লুকিং ছিল তার কিছুই এখানে নেই। আর হ্যাঁ বারবার কাঞ্চনার নাম টেনে আনার কারণ একটাই তা হলো, লাক্সমী মূলত কাঞ্চনার পুরোপুরি রিমেক না হলে প্রায় অর্ধেকের মতো মিল রয়েছে, তাই হুবহু রিমেক না বলে কাঞ্চনা থেকে অনুপ্রাণিত বলা যেতে পারে। তারপরও যারা হরর কিংবা অক্ষয় বা কিয়ারার প্রতিভাবান ভক্ত তারা নিঃসন্দেহে দেখে নিতে পারেন।