শার্লক হোমস নামটার সাথে আমাদের সবারই শৈশব কমবেশ পরিচিত। অসাধারণ লেখনীর অসাধারণ সব গল্প নিয়ে বানানো হয়েছে আধুনিক এই টিভি সিরিজটি। স্যার আরথার কনান ডয়েলের গল্প অনুসারে সিরিজের এপিসোডগুলো হুবহু বানানো না হলেও প্রতিটা এপিসোডেই উনার গল্পের ছায়া অবলম্বনে তৈরি করা হয়েছে। স্টেভেন মোফাট ও মার্ক গেটিস এই সিরিজটি নির্মাণ করেছেন। যেখানে শার্লক হোমস চরিত্রে অভিনয় করেছেন বেনেডিক্ট কাম্বারব্যাচ, ডক্টর ওয়াটসন হিসেবে মার্টিন ফ্রিম্যান!
সিরিজটির লেখক হিসেবে Steven Moffat আর Steve Thompson-এর সাথে ছিলেন Mark Gatiss, যিনি আবার প্রতি এপিসোডে মাইক্রফট হোমস হিসেবে অভিনয়ও করেছেন! ভিন্ন ভিন্ন সময়ে একাধিক পরিচালক দ্বারা সিরিজটি পরিচালিত গলেও আমার কাছে কোনো ঘাটতি চোখে পড়েনি। তহে সবচেয়ে বেশিবার পরিচালনা করেছেন Paul McGuigan। এরপর আছেন Toby Haynes এবং Euros Lyn।
টিভি সিরিজঃ শার্লক
ইন্ডাস্ট্রিঃ হলিউড
ভাষাঃ ইংলিশ
দেশঃ ইউ কে
মোট সিজনঃ ০৪ টি
রিলিজ সালঃ (২০১০ – ২০১৭)
আইএমডিবি রেটিংঃ ৯.১/১০
পার্সোনাল রেটিংঃ ৯.৫/১০
ক্রিয়েটরঃ মার্ক গ্যাটিস, স্টিভেন মোফাত
কাস্টঃ বেনেডিক্ট কম্বারবাচ, মার্টিন ফ্রিম্যান
জনরাঃ ক্রাইম, ড্রামা, মিস্ট্রি, থ্রিলার
বেনেডিক্ট কাম্বারব্যাচকে চিনে না এরকম হলিউড ফ্যান খুব কমই আছে। অসাধারণ স্টাইল আর অভিনয় নিয়ে বলে শেষ করার মতো না। নিঃসন্দেহে তিনি হলিউডের সেরা অভিনেতাদের মধ্যে একজন। অপরদিকে তার সহযোগী মার্টিন ফ্রিম্যানও ওয়াটসন চরিত্রের সাথে একদম মিশে গেছেন। দুইজনের ক্যামিস্ট্রি সিরিজটিকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলে।অন্যদিকে আবার সমভিত্তিক কিছু রসিকতা রয়েছে যা দেখে আপনি হাসতে বাধ্য হবেন।
শার্লকের ভাই মাইক্রোফটের অভিনয়ও দারুণ ছিল শার্লকের ডোন্ট কেয়ার ভাব আর ঝগড়াঝাটি মনোভাবের মধ্যেই যেন তার ভাইয়ের প্রতি একধরনের ভালবাসা লুকায়িত আছে। যদিও সে সামনাসামনি মাইক্রোফটকে পাত্তা দেয় না, কিন্তু তার ভাই মাইক্রোফট ভাইকে নিয়ে বেশ চিন্তায় থাকে। আশেপাশে শার্লকের এত এত শত্রু যে রক্ষা না করে উপায় নেই।
ভিলেন হিসেবে জেমস মারিয়ারটিকে আমার বেশ ভালোই লেগেছে। টেনে টেনে কথা বলার এক্সপ্রেশন গুলো অস্থির মনে হয়েছে। তবে শার্লকের তুলনায় একটু কমই মনে হয়েছে।
বিখ্যাত গোয়েন্দা শার্লক হোমসের বিষয়ে যেহেতু সবাই কমবেশি জানে তাই আমি আর এর কাহিনি নিয়ে বেশি আলোচনা করব না, কারণ এত সুন্দর সিরিজের কাহিনি আলোচনা করে মজাটা নষ্ট করতে চাই না।
বড় ভাইয়ের সাজেশনে প্রথম সিজনের এক এপিসোড দেখেই আমি বড় রকমের টাসকি খেয়েছিলাম। কী সিরিজরে বাবা! বড্ড আফসোস হলো এতোদিন দেখিনি বলে। তারপর লাগাতার প্রথম সিজনের তিনটা এপিসোড শেষ করে রীতিমতো শার্লক আর ওয়াটসনের প্রেমে পড়ে গেলাম। অন্য কিছু নিয়ে বসতেই পারছিলাম না। সারাক্ষণ মাথায় শার্লক ঘুরতে শুরু করলো। কখন শেষ করবো এমন একটা ভাব।
দ্বিতীয় সিজন থেকে শুরু হয় আরো কঠিন খেলা!অপ্রত্যাশিত আর কাহিনি মারপ্যাঁচ গুলো অসম্ভব রকমের থ্রিলে আপনি সিরিজে ডুবে যেতে বাধ্য। নতুন ভিলেনের আগমন আর রোমান্টিকতা এপিসোডের সময় গুলোকে অস্থির করে তুলে।
দ্বিতীয় সিজনের অপ্রত্যাশিত ঘটনা আর রহস্য গুলো আপনাকে নিয়ে যাবে তৃতীয় সিজনে। শার্লকের ফিরে আসা,আপনার ব্যথিত মনকে আবার খুশিতে ভরিয়ে দিবে। খেলা শুরু হবে নতুনভাবে নতুন আঙ্গিকে, আরও কঠিন রুপে।
শার্লক হোমস এর ব্যাপারে আপনাকে ভাবাবে, আরও কঠিন করে তুলবে পরিস্থিতি। তারচেয়েও কঠিন করে এগুবে চতুর্থ সিজনের প্রত্যেকটা এপিসোড। আপনি ভাববেন একদিকে আর স্ক্রিন আপনাকে নিয়ে যাবে অন্যদিকে। যতই সিরিজের ভেতরে ডুবতে দিতে থাকবেন, এপিসোডের সময়ও ততই কমে আসবে। টান টান উত্তেজনা আর শ্বাস রুদ্ধকর পরিস্থিতি আপনাকে এনে দিবে এক রকম প্রেমময় অস্থিরতা।
দারুন রোমাঞ্চকর আর টুইস্টে ভরপুর শার্লক হোমস সিরিজ প্রতিটি এপিসোড আপনাকে দিবে ভরপুর তৃপ্তি।প্রত্যেকটা সিজনেন প্রত্যেকটা এপিসোডে আপনি পাবেন ফুল প্যাকেজ।রোমান্স, কমেডি,রহস্য। তাছাড়া ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক গুলো ছিল অসম্ভব সুন্দর। সব গুলো দৃশ্যের সাথে যেন একদম খাপেখাপ।
এখানে একটা খুশির বিষয় হচ্ছে যারা লম্বা প্যাচের সিরিজ পছন্দ করেন না, তাদের জন্যে একটা সুবিধা রয়েছে। আর সেটা হচ্ছে, প্রতি এপিসোডের রহস্য সেই এপিসোডেই সমাধান হয়ে যায়, তারমানে আপনাকে জোর করে পরের এপির অপেক্ষায় থাকতে হবে না। আর প্রত্যেক এপিসোডে সিম্পল সমাপ্তি থাকলেও সিরিজটা আপনাকে শেষ পর্যন্ত আরামসে নিয়ে যাবে। কেননা অযথা টেনে টেনে বড় করা হয়নি। যতটুকু আছে একটুকু অকাজের না।
সিরিজের ক্ষেত্রে কাহিনি বা মূল গল্পের দিকে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সবার মনোযোগ থাকে কিন্তু এই সিরিজে আমার ক্ষেত্রে একেবারে ব্যতিক্রম ঘটেছে। আমি অধিকাংশ সময় স্ক্রিনে শুধু শার্লকের মন ঝাঁঝালো স্টাইল দেখেছি৷ কাউকে পাত্তা না দেয়া, অনিয়ম, অগোছালো, বেখেয়ালিপানা সবকিছুই অসাধারণ লেগেছে। আর সবচেয়ে পছন্দের এপিসোড A Scandal in Belgravia। যেখানে আইরিন আর শার্লক এর অস্থির প্রতিযোগিতা, কার আইকিউ দিয়ে কাকে হারাবে। দুজনেরই হাড্ডাহাড্ডি রকমের সমানতুল্য চিন্তা ভাবনা। শার্লক হারতে হারতে জিতবে নাকি হেরে যাবে তা নিয়ে আপনি থাকবেন শঙ্কায়।
সর্বোপরি, একটা কথা বলব যে, এই শার্লক এবং ওয়াটসনের চরিত্র আপনাকে শেখাবে জটিলতা, ভদ্রতা আর সামনের এগিয়ে চলার হার না মানা প্রচেষ্টা।