একটা সময় ছিল যখন কন্নড় ইন্ডাস্ট্রিকে বাইরে থেকে তেমন কেউ চিনতো না। কেবল যারা নিয়মিত খোঁজখবর রাখত তাদের চোখে পড়ত। কিন্তু বর্তমানে তাদের মুভির কোয়ালিটি এবং অসাধারণ দক্ষতার জোরে মোটামুটি সবাই কন্নড় ইন্ডাস্ট্রিকে আলাদা স্থানে রেখেছে। ব্যয়ের দিক থেকে খুবই মিতব্যয়ী, কিন্তু মুভির মানের ক্ষেত্রে অসাধারণ প্রতিফলন, যা নিঃসন্দেহে সবার জন্য ভালো কিছু। তাদের বেশিরভাগ মুভিতেই আমি দেখি, সাধারণ কোনো গ্রামীণ গল্প কিংবা সাদামাটা জীবনের গল্প নিয়ে মুভি শুরু করে দেয়, অথচ মুভির কোয়ালিটির কথা বললে সাউথের আর কয়েকটা ধুরুম-ধারাম ইন্ডাস্ট্রি থেকে শতগুণে ভালো। তারই আলোকে এই মুভির প্রতি আলাদা একটা টান আসে, সেই ভেবে দেখতে বসা।
পরিচালক পরিচালনার জগৎ এ একদমই নতুন বলা যায়, তবে Karthik Saragur অর্থাৎ পরিচালক ২০০৬ সালে বিখ্যাত মুভি Dor (2006) সেখানে কস্টিউম ডিজাইনার হিসেবে ছিলেন। আর এটিই মূলত তার সিনেমা জগৎ এর অন্যতম সফলতা।
মুভিঃ ভীমসেনা নলমহরাজা
ইন্ডাস্ট্রিঃ কন্নড়
ভাষাঃ কন্নড়
দেশঃ ভারত
রানটাইমঃ ১৪০ মিনিট
রিলিজ সালঃ ২০২০
আইএমডিবি রেটিংঃ ৬.৮/১০
পার্সোনাল রেটিংঃ ৭/১০
পরিচালকঃ কার্তিক সরগুর
কাস্টঃ অরবিন্দ ইয়ের, আরোহী নারায়ণ, প্রিয়াঙ্কা থিম্মেশ
জনরাঃ ড্রামা
মুভির শুরুতেই দেখা যায় বৃদ্ধাশ্রমে কর্মরত এক খ্রিস্টান মেয়েকে যার নাম সারা ম্যারি (Priyanka Thimmesh)। বৃদ্ধদের কোনোরকম অবহেলা না করে নিজের আপন মানুষের মতো দিনরাত পরিশ্রম করে লাগাতার দিয়ে যাচ্ছে শ্রম। অপরদিকে একটি রেস্তোরাঁর বাবুর্চি হিসেবে আছে আমাদের গল্পের নায়ক লাথেশা (Aravinnd Iyer)। আর তার প্রেমিকা অর্থাৎ সে যার গল্প বলতে যাচ্ছে, অসাধারণ চাঞ্চল্যকর একটা গল্প আর অভিনয়, চরিত্রে অভিনয় করেছে Arohi Narayan. সবার অভিনয়ের মানের কথা বলার আগে আমি বলতে চাই, তারা মুভি পর্দায় একেবারেই নতুন বলা যায়৷ আর নতুন অবস্থায় যেটুকু দক্ষতার প্রতিফলন দেখিয়েছে, আমার হিসেবে মন্দ না। আশা করি ভালোই লাগবে।
একটা কথা আমরা প্রায়ই বলি, “মানুষের জীবন কোনো গল্প কিংবা সিনেমা’কেও হার মানায়”। তাই অনেকে গল্প কিংবা সিনেমার চেয়ে মানুষের জীবনে পা বাড়ান বেশি, জানতে চেষ্টা করেন, মিশতে চেষ্টা করেন প্রতিনিয়ত নতুন নতুন মানুষের সাথে। ঠিক তেমনি সারা ম্যারির মাদার তাকে সামান্য বিরতি আর নতুন কিছু জানাতে পাঠিয়ে দেয় লম্বা এক ভ্রমণে। বহুদূরে বহু মাইল পেরিয়ে অজানা অদেখা কোনো নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হয়ে তার হাতের খাবার খাওয়া কিংবা তার জীবনী থেকে দু’চারটা গল্প শোনা অসাধারণ কিছু মূহুর্ত ছাড়া কিছুই না। ব্যক্তিগতভাবে আমার এই বিষয়টা বেশ পছন্দের। নতুনত্বের সাথে নিজেকে মানিয়ে নেয়া। তো সারা সেখানে যেতে যেতে প্রায় সন্ধ্যা গড়িয়ে যায়, তো রাতের খাবার হিসেবে একজন তাকে বিরিয়ানি এনে দেয়, যা খেয়ে সে রীতিমতো স্তব্ধ৷ এত স্বাদের বিরিয়ানি, যে রান্না করেছে তাকে নিজে গিয়ে একটা ধন্যবাদ না দিলেই যেন নয়।
সারা তার সাথে দেখা করতে চাইলেও যেন আমাদের গল্পের মূল নায়ক বাবুর্চি লাথেশা দেখা করতে নারাজ। আসলে তার দেখা করতে আপত্তি নেই, কিন্তু ধন্যবাদ নিতে আপত্তি। কারণটা খুব বেশি জটিল না। তার জীবনে ধন্যবাদ দেয়া রমণীর সংখ্যা অসংখ্য হলেও একজন আছে, যার ধন্যবাদ তাদের সম্পর্ক টেনে নিয়েছে বহুদূর। যে আছো তার পাশে আছে কি-না জানি না, তবে ধন্যবাদ শুনলেই বারবার মনে পড়ে যায়, তার কথা। এসব শোনার পর সারা জেদ ধরে বসে যে সে সম্পূর্ণ গল্পটা শুনবে। সম্পূর্ণ অপরিচিত একজন মানুষের কাছে একেবারে সম্পূর্ণ অপরিচিত একটা গল্প বলতে যাচ্ছে সে, নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে। সেই কারণটাই আপনি পেয়ে যাবেন শেষ মিনিটের মাথায়। তো, লাথেশার গল্প শুরু হয়, তার ব্যক্তিগত জীবন থেকেই৷ এতিমখানায় বড় হয়ে, আস্তে আস্তে করে রান্না শিখে বাবুর্চি হয়েছে। অপরদিকে গল্পের নায়িকা ভেদাবালী বা ভেদা সে কিছুটা মোটা, কিছুটা বললে সম্ভবত ভুল হবে, প্রায় অনেকাংশই মোটা। কারণ তার বাবার রয়েছে একটা বেকারি, যেখানে কেক সহ নানান খাবার তৈরি করা হয়। তো নিজের পাশে দোকান থাকে মানেই ইচ্ছেমতো খাওয়া-দাওয়া। এসব বাজে অভ্যাসের জন্য বাবার হাতে রুষ্ট হয়ে অবশ্য ভেদার মা ছোটবেলায় মারা যায়।
যার জন্য ভেদা তার বাবাকে দোষী মেনে নিয়ে সেদিন থেকে একটা টু শব্দ পর্যন্ত করেনি। একবার ছেলে পক্ষ দেখতে আসায় সে করে বসে আরেক তুলকালাম কান্ড, বাবার হাত থেকে বাঁচতে বান্ধবীর সহায়তা দ্রুত সেই বাসা থেকে বেরিয়ে চলে আসে লাথেশের এই রেস্তোরাঁয়। সেখান থেকেই তাদের প্রেমের গল্প শুরু। সাধারণ প্রেম গল্পের মতোই বাবা মেনে না নেয়ায়, তারা নিজেদের মতো আলাদা সংসার গড়তে শুরু করে এবং একটা ফুটফুটে মেয়েও হয়। কিন্তু লাথেশের এতিমখানার ছোট্ট কালের এক বন্ধুর ক্যাচালে তাদের মতো বাকরুদ্ধতা হয় এবং লাথেশ মেয়েকে নিয়ে মধ্যরাতে সেখান থেকে বেরিয়ে আসে। ঘটনা এটুকু হলেও পারত, কিন্তু এদিকে দিশেহারা হয়ে তাড়াহুড়ায় ভেদা এক্সিডেন্ট করে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে এবং তার স্মৃতিশক্তি চলে যায়।
মনে হচ্ছে এটাতো নিয়মিত গল্প, স্মৃতিশক্তি হারিয়ে গেছে এখন সেই স্মৃতি ফিরিয়ে আনবে এ আর আহামরি কী। কিন্তু না, স্মৃতি ফেরানোর জন্য এরকম ক্রিয়েটিভ পরিকল্পনা সাজিয়েছে তা সত্যিই অসাধারণ৷ এবং আগে কখনও এত অসাধারণ সফলতা দেখিনি।
এই অংশে কিছু বলতে পারছি না, কারণ কিছু বললেই স্পয়লার হয়ে যাবে। তাই আরামসে দেখে ফেলুন সম্পূর্ণ মুভিটি।
শেষের দিকটা আমার কাছে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয় মনে হয়েছে। তবে হ্যাঁ, প্রথমদিকে গল্প অনেকটা খাপছাড়া ছিল, অনেকের কাছে বোরিং বা সাধারণ গল্প মনে হতে পারে। কারণ মুভির এক্টিং কাস্ট কিংবা পরিচালক সবাই মোটামুটি নতুন ছিল। তবে অযথা রানটাইম না বাড়িয়ে প্রথমদিকে আর একটু গোছানো যেত। তাও এটুকু বলতে পারি, সম্পূর্ণ মুভি দেখার পর আপনি বলতে বাধ্য হবেন, আসলেই অসাধারণ ছিল।
ধন্যবাদ।