সিরিজের ক্ষেত্রে একটা জিনিস বেশ লক্ষ্যণীয়, সেটা হচ্ছে সিরিজের স্টার্টিং। কিছু কিছু সিরিজের ক্ষেত্রে স্টার্টিং এতটাই স্লো হয় যে, দর্শক বিরক্ত হয়ে দেখা বন্ধ করে দেয়, এবং এই কোয়ালিটির সংখ্যাটাই আসলে বেশি হয়ে থাকে। কারণ পরিচিতি পর্ব মিলিয়ে সম্পূর্ণ সিরিজকে দাঁড় করাতে বেশ খানিকটা সময় লেগে যায়। আর কিছু কিছু সিরিজ আছে ব্যতিক্রম, যারা শুরু থেকেই ধমাধম সব আকর্ষণীয় ফুটেজ দিয়ে সিরিজকে প্রথম থেকেই প্রাণবন্ত রাখে।
ক্রিয়েটর অ্যালেক্স পিনা যা তকমা লাগিয়েছে দর্শকদের মাঝে, একেবারেই পুরাই চখম। অ্যালেক্স পিনা অবশ্য লেখক এবং প্রডিউসার হিসেবেই বেশি সমাদৃত। তার লেখনীতে রয়েছে অসংখ্য জনপ্রিয় সিরিজ এবং মুভি। যার মধ্যে Vis A Vis সিরিজটিও রয়েছে জনপ্রিয়তার শীর্ষে।
সিরিজঃ লা কাসা দে পাপেল (মানি হেইস্ট)
ইন্ডাস্ট্রিঃ স্প্যানিশ
ভাষাঃ স্প্যানিশ
দেশঃ স্পেন
মোট সিজনঃ ০২ (পার্ট ৪)
রানটাইমঃ ৭০ মিনিট গড়
রিলিজ সালঃ (২০১৭- )
আইএমডিবি রেটিংঃ ৮.৪/১০
পার্সোনাল রেটিংঃ ৭.৫/১০
ক্রিয়েটরঃ অ্যালেক্স পিনা
কাস্টঃ আরসুলা কর্বেরি, আলভারো মুর্তে, ইত্জিয়ার ইটুয়ানো, পেড্রো আলোনসো, প্যাকো টাউস, আলবা ফ্লোরস
জনরাঃ অ্যাকশন, ক্রাইম, মিস্ট্রি
সিরিজ এই “লা কাসা দে পাপেল” (মানি হেইস্ট)। স্প্যানিশ টাইটেলের এই সিরিজটি জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকায় স্প্যানিশ ভাষার সাথে সাথে ইংরেজি ভাষায়ও রিলিজ পায়। বর্তমানে নেটফ্লিক্সের সবচেয়ে ব্যবসাসফল সিরিজও এটি। দিন দিন এর জনপ্রিয়তা আর আয় বেড়েই চলছে, যার কারণে মোটামুটি একধরনের জোর করে নেটফ্লিক্স এটাকে দীর্ঘায়িত করেই চলছে। যেখানে ২ থেকে ৩ পার্টে শেষ হয়ে যেতে পারত, সেখানে ৪ পার্ট শেষ করে, ৫ম পার্টের শ্যুটিং করে দিয়েছে, এবং সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে সম্ভবত জানুয়ারিতেই চলে আসবে এর শেষ পর্ব।
যেহেতু বিশাল দীর্ঘায়িত সিরিজ সেক্ষেত্রে অবশ্যই নির্দিষ্ট কারও উপর এই সিরিজ স্থাপিত বলা যাবে না। ছোট বড় কাস্টিং মিলিয়ে কাজ করেছেন আরও অনেক গুণী অভিনেতারা। তবে ব্যক্তিগত পছন্দের লিস্টে সবারই কমবেশি উথলপাথল হয়েছে৷ আর আমি ব্যক্তিগতভাবে প্রফেসরের (Álvaro Morte) স্টাইলটাকে খুব পছন্দ করেছি। মানে আপনি কোথাও বিশাল বড় ডাকাতি কিংবা অবৈধ কাজে হস্তক্ষেপ করছেন অথচ আপনাকে দেখে তা বুঝার উপায়ই নেই, উলটো আপনি তাদের ঘরে বসেই তাসার বাটি নিয়ে খেলে দিচ্ছেন, বিষয়টা কেমন হবে? নিশ্চয়ই বেশ জমজমাট। সিরিজে এবং সিরিজের খাতিরে রিয়েল লাইফেও সবাই তাকে প্রফেসর হিসেবেই চিনে। আর সিরিজের নাম দেখে আশা করি বুঝতেই পারছেন, সিরিজের মূল কেন্দ্রবিন্দু হতে যাচ্ছে ডাকাতি নিয়ে। সিরিজের প্রথমদিকে থাকছে বিশাল চক্রাকার ধাঁধালো ব্যাংক ডাকাতি। পুরো একটা বিশাল টিম মিলে যে প্রজেক্টের মাঠে নামে, এবং সেখানে তাদের নেতৃত্ব দেয় আমাদের প্রিয় এই প্রফেসর। তাছাড়াও টিমে যারা ছিল এবং যাদের ব্যক্তিগতভাবে একটু বেশিই ভালো লেগেছে, তাদের নাম উল্লেখ না করে পারলাম না।
গল্পের শুরুটা হয় টোকিওকে দিয়ে। যে মূলত এই গল্পের প্রধান কথক। আর হ্যাঁ এখানে টোকিও নাম দেখে নিশ্চয়ই অবাক হচ্ছেন। জাপানের এতবড় রাজধানীর নাম হঠাৎ আমি সিরিজে কেন বললাম বা তারাই কেন সিরিজে এই নাম ব্যবহার করলো, অবশ্যই তার একটা মজাদার কারণ আছে। বলছি একটু পরে, তার আগে টোকিও সম্পর্কে একটু বলে নেই। টোকিও অপরাধ চক্করে ফেঁসে নিজের পুলিশ গ্রেফতারি ডাক পেয়ে যখন এদিকসেদিক হন্নে হয়ে ছুটছিল, ঠিক তখনি দেখা মিলে প্রফেসর সাথে। হুট করে আচমকা দেখা হতেই টোকিও সম্পর্কে এ টু জেড সব গড়গড় করে বলা শুরু করে দিলো। কে এই লোক আর এতকিছু জানে কীভাবে? তার উদ্দ্যেশ কী?
উত্তরগুলো খুব কঠিন কিছু না। প্রফেসর এমন কাউকে খুঁজে বেড়াচ্ছে যার জীবন শুধু আইনের বাশ দিয়ে ভরা। অর্থাৎ পুলিশ যাকে হন্নে হয়ে খুঁজছে, যাদের নেই মৃত্যুর ভয়, ধরা খাওয়ার ভয় এবং কিছুটা বুদ্ধিদীপ্ত অপরাধী। সে হিসেবেই প্রফেসরকে টোকিওকে মানিয়ে তার ব্যক্তিগত অন্দরমহলে নিয়ে যায়। যেখানে টোকিও ছাড়াও আরও রয়েছে বেশ কয়েকজন। একে একে সবার সাথেই পরিচয় হয়ে গেল, কিন্তু সেটা একেবারেই ফেইক বা মিথ্যে পরিচয়। কারণ প্রফেসর প্রথম শর্ত হিসেবেই জুড়ে দিয়েছেন, কেউ কারো ব্যক্তিগত সত্যিকারের নাম, পরিচয় বা অনুভূতি অপরের সাথে শেয়ার করতে পারবে না। তাহলে একে অপরকে ডাকবে কী নামে? এখানেও উত্তরটা সহজ করে দিয়েছেন প্রফেসর। সবাইকে বিভিন্ন বিখ্যাত শহরের নামানুসারে নাম হিসেবে বসিয়ে দিয়েছেন। আর সবাই প্রফেসরকে ভালোবেসে প্রফেসর নামেই ডাকে।
দীর্ঘদিনের সুবিশাল অভিন্ন ট্রেনিং শেষ করে পুরো টিম চলে যায় টাকা ছিনতাই করতে৷ আপনার আপাত দৃষ্টিতে মনে হবে একেবারেই সাধারণ ডাকাতির গল্প, তবে এই সাধারণ ডাকাতির জন্য কেন-ই বা এত রঙ্গসজ্জা। মোটেও না, আমার, আপনার আর প্রশাসনের দৃষ্টিকে ফাঁকি দিয়ে প্রফেসর করেছে ভিন্ন এক প্ল্যান। টাকা চুরি হবে ঠিকই কিন্তু সংখ্যাটা নির্ধারিত না। বাকিটা সিরিজ দেখেই বুঝে নিতে হবে। এখান থেকে আর কিছু বলতে চাই না, কারণ বললেই স্পয়লার হয়ে যাবে, আপনি অসাধারণ এই বিশ্বখ্যাত সিরিজটি মিস করে ফেলবেন।
অভিনয়ের দিক থেকে বিন্দুমাত্র খুঁত ধরার সুযোগ নেই। সবাই যার যার অবস্থান থেকে একেবারেই পিউর মাস্টারপিস অভিনয় করে দেখিয়েছে। পাশাপাশি প্রয়োজনের খাতিরে যে কয়েকটা ইমুশনাল সিন দেখানো হয়েছে তা একেবারেই বাকরুদ্ধকর অবস্থায় ছিল। কাউকে প্রথমে ঘৃণা করলেন খানিক বাদে সম্পুর্ন সত্য জানার পর যখন তাকে ভালোবাসতে শুরু করবেন, আবার ঠিক তারপরই যখন দেখবেন সে আর আমাদের মাঝে নেই, কেমন ফিল হবে? মনে হবে যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে, কারণ আমি আগেও একবার বলেছিলাম, সিরিজ যদি মনোযোগ দিয়ে দেখেন তাহলে আপনি কারও কারও না চরিত্রের প্রেমে পড়তে বাধ্য।
এত অসাধারণ একটি সিরিজের আইএমডিবি রেটিং সহ অন্যান্য রেটিং কমার কারণ শুধু একটাই তা হলো, যেখানে প্রথম দ্বিতীয় কিংবা সর্বোচ্চ তৃতীয় পার্টে শেষ করা যেত, সেখানে কেন অপ্রয়োজনীয় দোহাই দিয়ে নতুন পার্ট এনে সবাইকে বিরক্ত করে দিয়েছে নেটফ্লিক্স। যাদের ভালো লেগেছে তারা আরও ২/৩ পার্ট এলেও তাদের আপত্তি নেই, কিন্তু যাদের ভালো লেগেছে কিন্তু অভাররিয়েক্টিংটা পছন্দ না তাদের কাছে কিছুটা টানাহ্যাঁচড়া অবস্থা মনে হয়েছে। বাকি সব মিলিয়ে বললে, আমার কাছে বেশ উপভোগ্য ছিল।
ধন্যবাদ।
This website uses cookies.