ফ্যান্টাসি জনরার সিরিজ মোটামুটি সবাই টুকটাক পছন্দ করে। কিন্তু তার সাথে যদি যুক্ত হয়, অসাধারণ থ্রিলার আর ঘাড়ধরা রাজনীতি, তখন আর মিস করতে যাবে কে! আজকের সিরিজটিতেও থাকছে উল্লেখিত সব নামকরা জনরা। সিরিজটির জনপ্রিয়তা এতটাই প্রখর ছিল, প্রচুর খরচ সাপেক্ষেও অতি অল্প সময়ে পরবর্তী সিজন আনার অফিশিয়াল নিউজ জানিয়ে দেয়া হয়েছে। অবশ্য রিলিজের আগেই সবাই নাকেমুখে ছিল, যে দীর্ঘদিন পর অসাধারণ কিছু আসতে চলেছে, যার জন্য সবাই উম্মুখ হয়ে বসে ছিল। অবশ্য অন্যান্য জনপ্রিয় সিরিজের মতো এটি বাংলাদেশে তেমন হাইপ তৈরি করতে পারেনি, তবে যারা রেগুলার সিরিজকেও প্রাধান্য দিয়ে সব সিরিজে বিশ্লেষণ করেন, তারা একেবারে মাস্টারপিস বলেই আখ্যায়িত করেছেন।
সিরিজটতে ক্রিয়েটর হিসেবে ছিলেন Travis Beacham, René Echevarria, যাদের দুজনকেই আমরা বেশ ভালোভাবে চিনি। প্রথমজনের কথা বলতে গেলে, ওনার বিখ্যাত মুভি Pacific Rim প্রায় সবারই দেখা। আর যারা দেখেননি দ্রুত তড়িঘড়ি করে দেখে ফেলুন, আর হ্যাঁ Pacific Rim: Uprising নামে একটি সিক্যুয়েলও রয়েছে৷ তাছাড়াও অন্যতম জনপ্রিয় কিছু মুভি- Electric Dreams, Clash of the Titans. অপরদিকে দ্বিতীয়জনের সম্পর্কে বলার জন্য একটা সিরিজই যথেষ্ট, তা হলো Teen Wolf. অসাধারণ জনপ্রিয় এই টিন ড্রামা সিরিজটি মোটামুটি সব জায়গায় সুনাম কামিয়েছে।
সিরিজঃ কার্নিভাল রো
ইন্ডাস্ট্রিঃ হলিউড
ভাষাঃ ইংলিশ
দেশঃ ইউএসএ
মোট সিজনঃ ০১
মোট এপিসোডঃ ০৮
রানটাইমঃ ৫৬ মিনিট গড়
রিলিজ সালঃ (২০১৯)
আইএমডিবি রেটিংঃ ৭.৯/১০
পার্সোনাল রেটিংঃ ৮.৫/১০
ক্রিয়েটরঃ ট্র্যাভিস বিচাম, রেনে এচেভারিয়া
কাস্টঃ অরল্যান্ডো ব্লুম, কারা ডেলিভেন্নে, সাইমন ম্যাকবার্নি
জনরাঃ ক্রাইম, ড্রামা, ফ্যান্টাসি
এই সিরিজে আপনি কিছু নতুন শব্দের সাথে পরিচিত হবেন, যেমন, ফ্র্যে, ক্রিচ, পাক। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এরা কারা বা কোথা থেকে শব্দগুলো নিয়ে আসা হয়েছে! ইউরোপিয়ান মিথোলজিতে এই ফ্যে হচ্ছে পরী যা মানুষের মতোই স্রেফ পিঠে একজোড়া ডানা রয়েছে৷ অপরদিকে পাক দেখতেও মানুষের মতোই তবে তাদের মাথায় রয়েছে মহিষের মতো ক্ষুর বা শিং এবং মহিষের পায়ের মতোই হাঁটুর দিকে কিছুটা বাঁকা। আর সিরিজের কেন্দ্রীয় চরিত্রে ফ্যে হিসেবে দেখা যায় ভিনয়েট স্টোনমোস নামে René Echevarria-কে এবং রাইক্রফট ফিলোস্ট্রেট হিসেবে Orlando Bloom-কে। দু’জনের অভিনয়ই যথেষ্ট সাবলীল এবং চিত্তাকর্ষক ছিল। যেহেতু সিরিজের রাইক্রফটের চরিত্রটা একজন ডিটেকটিভ এর, তাই তার চলনভঙ্গিও ঠিক সেরকম গাম্ভীরতায় চতুরপূর্ণ ছিল। তবে একজনের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয় তা হলো David Gyasi যিনি পাক হিসেবে এগ্রিয়াস চরিত্রে বেশ মানানসই অভিনয় করেছেন। অর্থবিত্ত থাকা স্বত্বেও সমাজে তার প্রকৃত অবস্থান একেবারেই কাঁচা, কেউ কেউ তো আবার তাকে তেমন গুরুত্বও দেয় না।
বিভিন্ন মিথোলজি অনুসারে ফ্যে-রা অনেক উচ্চবিত্ত ছিল, তাদের ধন-সম্পদেরও ছিল অটল ভান্ডার। আর সেখান থেকেই তাদের সম্পদ নিয়ে দ্বন্দ্ব বাঁধতে শুরু করে আশেপাশের মানব জাতির।ফ্যে-দেরকে তাদের জন্মভূমি ছাড়াতে লুট, ছিনতাই, রাহাজানি করে উচ্ছিষ্ট করার জন্য উঠে পড়ে লাগে সবাই। আর তখনি ভিনয়েটের সাথে পরিচয় হয় রাইক্রফটের, নিজেদের মাঝে ধীরে ধীরে গড়ে উঠতে থাকে সখ্যতা। একে-অপরকে ভালোবাসতে শুরু করে মনপ্রাণ উজাড় করে। কিন্তু হঠাৎ এক আক্রমণে তারা সবাই বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং ফ্যে-রা তাদের আবাসন ছাড়তে বাধ্য হয়৷ ভিনয়েট কোনোরকমে তার জান নিয়ে পৌঁছে বিখ্যাত নগরী কার্নিভাল রো-তে। যেখানে কাকতালীয়ভাবে দেখা হয়ে যাবে পূর্ব পরিচিত রাইক্রফটের সাথে। এদিকে রাইক্রফটের সামনে নতুন এক চ্যালেঞ্জ এসে দাঁড়িয়েছে। অদ্ভুতভাবে এক মহিলা খুন হলো, যার শরীরকে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে গুরুত্বপূর্ণ একটা অঙ্গ নিয়ে খুনি উধাও হয়েছে। যেখানে নেই কোনো প্রমাণ বা সন্দেহের যতিচিহ্ন। ঘটনা এখানে থেমে থাকলেও সাধারণ মেনে নেয়া যেত, কিন্তু তারপর একইভাবে একই পদ্ধতি আরও একজন ডাক্তার খুন হয়।
ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে রাইক্রফটের কাছে বিষয়গুলো কেমন জানি পরিচিত মনে হতে লাগে। আর ঠিক সেভাবেই গল্পের মোড় আগাতে থাকে খুনির আগাগোড়া খোঁজার। আর তার সাথে তো থাকছেই কার্নিভাল রো-এর জনপ্রিয় সব রাজনৈতিক ব্যক্তিদের রাজনীতির দৌড়। সবমিলিয়ে বেশ উপভোগ্য কিছু থ্রিল রয়েছে।
পুরনো ধাঁচের কিংবা পূর্ব সভ্যতার রাজনৈতিক সিরিজগুলো আমার ব্যক্তিগতভাবে অনেক ভালো লাগে। যেমন, ইতিহাস অবিস্মরণীয় সিরিজ গেম অফ থ্রোনস আমার প্রথম পছন্দ। আমি বলছি না, কার্নিভাল রো আর গেম অফ থ্রোনস কাছাকাছি, তবে বলা যায়, গেম অফ থ্রোনস এর খানিকটা ফিল পাবেন। এবং যারা ফ্যান্টাসি জনরার মুভি সিরিজ পছন্দ করেন, তারা তো এক্সট্রা মাখন পেয়ে যাবেন। ফ্যান্টাসি, রাজনীতি, রোমান্স, সাইকো-কিলারের থ্রিলিং গল্প মিলিয়ে একেবারে ফার্স্ট ক্লাস একটা সিরিজ বলা যায়।
This website uses cookies.