ইন্ডিয়ান ওয়েব সিরিজগুলো নিয়ে অবশ্য আমরা এর আগেও একবার বলেছিলাম, তাদের কিছু কিছু সিরিজ প্রশংসার উর্ধ্বমাত্রাকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে দিনদিন। একেবারে হটলিস্টে যেগুলো আছে তার মধ্যে প্রথমদিকে যে নামটি খুব সহজেই চলে আসে সেটি হচ্ছে এই অসুর সিরিজ। মাত্র ৮ এপিসোডের এই মিনি সিরিজটিতে আপনি পাবেন ধাম ধমাধম সব সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার অনুভূতি। অনেকেই শেষাংশ নিয়ে সন্তুষ্ট নয়, তবে আমার এতে কোনো আপত্তি নেই। কারণ সবকিছুর সমাধান পরিচালক করে দিলে আমাদের কাজটা কী? এখানেও একই গড়নে সামনে এগিয়ে পরিচালক দর্শকের উপর শেষ প্রশ্নটা ছুড়ে মেরেছেন। যেন আমরা আমাদের পছন্দসই উত্তর খুঁজে নিতে পারি।
পরিচালনার বিষয়ে বলতে গেলে পরিচালক “গৌরব শুকলা” ভারতীয় সিরিজ হিসেবে খুবই নিখুঁত পরিচালনা টেনে দেখিয়েছেনে। তার ক্যারিয়ারের খাতায় অবশ্য একেবারেই নতুন, কিন্তু সে তার অবস্থান খুন পাকাপোক্তভাবেই শুরু করেছেন। যার দেখা পাওয়া যায় সবার প্রিয় অভিনেতা প্রয়াত ইরফান খান অভিনীত ২০২০ এর অন্যতম সফল মুভি Angrezi Medium-এ। যেখানে গৌরব শুকলা শুধু পরিচালক হিসেবেই নন, গল্পের লেখক হিসেবেই বেশি সরব ছিলেন।
মুভিঃ অসুরঃ ওয়েলকাম টু ইউর ডার্ক সাইট
ইন্ডাস্ট্রিঃ বলিউড
ভাষাঃ হিন্দি
দেশঃ ভারত
মোট সিজনঃ ০১
মোট এপিসোডঃ ০৮
প্রতি এপিসোডঃ ৪৩ মিনিট (গড়ে)
রিলিজ সালঃ (২০২০- )
আইএমডিবি রেটিংঃ ৮.৪/১০
পার্সোনাল রেটিংঃ ৮/১০
ক্রিয়েটরঃ গৌরব শুক্লা
কাস্টঃ আরশাদ ওয়ার্সি, বরুণ সবটি, অনুপ্রিয়া গোয়েঙ্কা, রিধি ডোগরা
জনরাঃ ক্রাইম, ড্রামা, থ্রিলার
কেন্দ্রীয় চরিত্রে বেশ কয়েকজনের উপস্থিতি থাকলেও যাদের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করতেই হয়, তারা হলো- Arshad Warsi, Barun Sobti, Anupriya Goenka, Ridhi Dogra, Vishesh Bansal. সবার অভিনয় নিয়ে কথা বলার আগে রিধি দোঘরার গ্ল্যামার নিয়ে একটু কথা বলতে চাই, রিধি মোটামুটি একটু পার্শ্ববর্তী, চাপা স্বভাবের চরিত্রে অভিনয় করেছিল কিন্তু আমার নজর অধিকাংশ সময়ই তার উপরে ছিল। কারণ তার চেহারায় অন্যরকম একটা ভাব আছে যা চরিত্রের সাথে মানানসই তো বটেই, তারপরও তাকে একটু বাড়তি অংশ হিসেবে স্ক্রিনটাইম বাড়িয়ে দেয়া যেত। এতে করে আমার মতো আরও অনেকেই তার রুপের প্রশংসার পূর্ণতা আদায় করে নোট পারত। অপরদিকে ড্যাশিং স্টাইলে নিখিল নায়েরের চরিত্রে একেবারে চখম অভিনয় করেছেন বরুণ শবতি। একজন ঠান্ডা মেজাজের সিনিয়র অফিসারের ভূমিকায় সচল ছিলেন ধনঞ্জয় রাজপুত চরিত্রে অ্যার্শাদ ওয়ার্সি। পুরো সিরিজ জুড়ে তাদের বাকবিতন্ডা আর মাইন্ডগেমের চলমান পরিস্থিতির জন্য সিরিজের গভীরতা পায়ে হেঁটেছে দৃষ্টিসীমা থেকে দূর-দূরান্ত অব্ধি।
অন্যান্য সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার মুভি বা সিরিজগুলোর মতো এখানকার স্টার্টিংটাও ব্যতিক্রমী ছিল না। দিল্লির প্রত্যন্ত এলাকায় দেখা মিলে এক লাশ, যার মধ্যে স্বাভাবিকভাবে নেই কোনো প্রমাণ আলামত বা ক্লু। অপরদিকে পাশাপাশি ভিন্ন সিনে দেখানো হয় মাতৃহীন এক কিশোরের, যার নাম শুভ। যেখানে তার বাবা তাকে প্রতিনিয়ত মানসিক প্রেশার ঢালতে থাকে আর জন্মের সময় শুভ’র মা মারা যায় বলে শুভর বাবা তার মায়ের মৃত্যুর জন্য শুভকেই দায়ী করে। এবং তার মতে শুভ কোনো সাধারণ মানুষ না, তার মাঝে বাস করে শয়তানি বসবাস, তার ভাষার যার নাম অসুর। শুভ বুদ্ধিমত্তায় বেশ এগিয়ে ছিল এবং তার স্মৃতি ও বোধগম্য শক্তিও ছিল বেশ প্রখর। যা খানিকটা নমুনা তুলে ধরছি।
একদিন শুভ খাটে বসে হিন্দুধর্মের পৌরাণিক একটা পবিত্র গ্রন্থ নিয়ে বসে পড়ছিল। তার বাবা যখন রুমে আসে উনি খেয়াল করলো যে, শুভ এত দ্রুত পাতা উল্টিয়ে যাচ্ছে, যেখানে একজন সাধারণ মানুষকে শুধু লাইন বাই লাইন পড়ে যেতেই অনেক সময় লাগবে, সেখানে আবার এগুলোর ব্যাখ্যাসহ উপস্থাপন করাটা দুঃসাধ্য বটে। তো তার বাবা তাকে প্রশ্ন করায়, সে উত্তর দিলো, তার পড়া শেষ। তখন শুভর বাবা রেগে গিয়ে তাকে বই খুলে ভেতর থেকে প্রশ্ন ধরতে শুরু করে। কিন্তু শুভ এমনভাবে একেরপর এক উত্তর দিয়ে যাচ্ছে যেন এসব তার কয়েক যুগ ধরেই মুখস্ত। ছেলের এই কান্ড দেখে উনি আরও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন।
হ্যাঁ, একইসাথে দুইটা সিন চলমান থাকায়, আমাকেও দুইটা সিন নিয়ে একইসাথে লেখতে হচ্ছে। তো দিল্লির ধারাবাহিক খুনের মধ্যে একটা মারাত্মক ভয়াতু অংশও ছিল যা নিয়ে আমি সম্পূর্ণ বলে দিতে নারাজ। তবে সহজ করে দিলেই তাদের মধ্যকারই কারো প্রিয় একজন মানুষকে হত্যা করে তার ভিডিও খামে করে পাঠিয়ে দেয়া হয় তার কাছে। তো বুঝতেই পারছেন কতটা ভয়াবহ অবস্থা। প্রথমদিকে সিরিয়াল কিলারকে ধরার দায়িত্ব ধনঞ্জয় রাজপুতের থাকলে একটা সমস্যার কারণে বিদেশ থেকে ডাক দেয়া হয়, প্রাক্তন সিবিআই কর্মী এবং ধনঞ্জয় রাজপুত এরই স্টুডেন্ট নিখিল নায়ের। যদিও তাদের মাঝে সম্পর্ক ওতটা ভালো না এবং তারা একটু দুরত্ব বজায় রাখতেই ভালোবাসেন। কিন্তু তদন্তের খাতিরে কাছাকাছি থেকে একে-অপরকে সাহায্য করে যান। তো এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তারা কি পারবে সেই খুনিকে খুঁজে বের করতে? পূর্বের ঘটনার সাথে কি এর কোনো যোগসূত্র আছে? না-কি তাদের মধ্যকার কেউ-ই এসবের সাথে সম্পৃক্ত?
সিরিজটির মূল ভিত্তি অবশ্য হিন্দু মিথোলজিকে ঘিরে। যেখানে অসুর এবং দেবতাদের মধ্যকার সাংঘর্ষিক অংশটাকে নিয়ে আলোচনা করা হয়৷ বারবার যেখানে অসুর দেবতাদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে মারে। তো এতবড় পৌরণিকতার সাথে যখন সিরিয়লা কিলিং এড করে দেয়া হয়, অবশ্য তা জনপ্রিয় এবং প্রশংসিত না হয়ে উপায় নেই। কিছু কাকতালীয় বিষয়, নিখিল নায়েরর পথিমধ্যে একটু বিদঘুটে অভিনয়, একই জিনিসের পুনরাবৃত্তি ছাড়া ওভারল বলতে গেলে আসলেই ভালো ছিল। তবে উপভোগ করার মতো একটা চরিত্রই যথেষ্ট ছিল, তা হচ্ছে শুভ চরিত্র এবং ওর অভিনয়। একেবারে চুপচাপ, মেধাবৃত্তিক, ডেভিল টাইপের যে ইনুসেন্টগুলো হয় তাদের প্রকৃত উদাহরণ ছিল।
ধন্যবাদ।
This website uses cookies.